বিস্কুট পাগলী



♥♥♥"বিস্কুট পাগলী♥♥♥
♣♣♣গল্পকার - জুনায়েদ অমিত
মেয়েটা ছিল ফেইসবুকে নতুন।
এবং স্বভাবতই টাকলা। 
আমার কাছে টাকলা মানে যারা বাংলা শব্দগুলোকে ইংরেজীতে টাইপ করে।
তার আইডি নেইম এর প্রথম অংশ ছিল বৃষ্টি যা ইংরেজিতে লিখেছিলো Bisty।
আমার আবার টাকলা দের সাথে চ্যাট করতে মজা লাগতো। তাই মজা লুটার জন্য ওরে মেসেজ দিছিলাম...
আমি- হাই
Bisty- helo
- কেমন আছেন?
- balo, apne?
- হাহা, আমি ভাল। তা কি করছেন?
- biskut kacci. apne?
- হাহা, বিস্কুট?
- ho, hasen kan?
- হাসি পাইলো তাই।
- amar biskut kaite ballage...I love biskut.
- তাই? তা আপনার নাম কি শুনি? বৃষ্টি?
- na, amar nam maya.
এভাবেই মায়ার সাথে পরিচয়। সে অনেক কিছুই বুঝতো না। বুঝিয়ে দিতাম। ওর টাকলা ভাষা পড়ে মজা পেতাম। সে বুঝতে পারতো না যে আমি ওকে টিটকারি মারছি, হাসছি ওর টাকলামি দেখে।
ওর প্রধান যে বৈশিষ্ট্য ছিল তা হলো বিস্কুট খাওয়া। কোন মানুষ কে দেখিনি এত বিস্কুট খেতে। যখনই মেসেজ দিতাম...সেটা রাত হোক, দিন হোক, দুপুরে লাঞ্চের সময় হোক... যদি জিজ্ঞেস করি কি করছো? বলে বিস্কুট খাচ্ছি। আমি ওর নাম রাখছিলাম "বিস্কুট-পাগলী"
যেমন কাল ওকে মেসেজ দিলাম,
- হাই, কেমন আছো?
- helo, balo na...mon ta kub karap
- কেন কি হইছে বিস্কুট পাগলী টার?
- amar biskut phurie gece, abbu k bolcilam kine anta ana ni.
- হায় রে কপাল...এখন কি হবে?
- Jane na, aj raite amar gum asba na...biskut cara gumaite parina.
- হুম, এ তো বিশাল প্রবলেম দেখছি। এখন কি করবা?
- ame bajara asce, biskut kinte...
- কিহ এত রাতে
- ha
- তা কোন দোকান খোলা পেলা?
- ha paice, kinece..
- বাহ গুড। তা কি বিস্কুট খাও?
- ame sob biskut kai, sudu tip biskut bade.
সে "টিপ বিস্কুট" খায় না। আগে খেতো। এখন কেন খায়না এটা জিজ্ঞেস করলে প্রথমে বলতে চাইলোনা। পরে অবশ্য বলেছিলো। ঘটনাটা এরকম।
একদিন সে টিপ বিস্কুট খেতে খেতে আসছিলো। তো পথে কয়েকটা বখাটে ওকে দেখে টিজ করছিলো। বিশেষ করে বিস্কুটটার নামের সাথে মিলিয়ে...আশা করি আপনারা বুঝেছেন টিজ টা কি নিয়ে হতে পারে। যাই হোক সে তো রেগে মেগে আগুন।
সে ছুটে গিয়েছিলো বখাটেদের দিকে, গিয়ে সোজা বিস্কুটের প্যাকেট টা ওদের সামনে যে ছিল সেই ছেলের মুখে দিয়েছিলো ছুড়ে। আর ছেলেটা ঠাস করে চড় মারছিলো ওর গালে। আর যত রকমের নোংরা গালি ছিল সব দিছিলো। সে তো পরে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় আসছিলো। পুরা একদিন কিছু খায় নাই। শুধু বিস্কুট খেয়ে ছিল।
তারপর থেকে টিপ বিস্কুট খাওয়া বাদ দিছে মায়া। এই বিস্কুটের নামও সে সহ্য করতে পারেনা। একবার নাকি ওর বাবা ওর জন্য কিনে আনছিলো এটা। সেদিন সে তাদের টিভির রিমোট আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলছিলো।
তো ওকে দেখতে মন চাইতো আমার। কিন্তু কিভাবে ছবি চাওয়া যায় বুঝতে পারছিলাম না। শেষে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
- তুমি যে এত বিস্কুট খাও তুমি মোটা হয়ে যাবানা?
- na jabo na.
- তাই? আচ্ছা তোমার হাইট কত?
- 5 fut 5 inci
- খাইছে। তুমি তো ভালোই লম্বা। আর ওজন?
- eita bolta parbo naa.
- কেন?
- onak kom ojon.
- আরেহ বলো, আমাকে বললে যে তোমার ওজন আরো কমে যাবে তা তো না।
- 38 keji
- কিহ? কমই তো।
- ho, amar pura bodir ojon holo 8 keji r amar dui galer ojon 30 keji.
- মানেহ? হাহাহাহা...তোমার গাল দুইটা অনেক মোটা নাকি?
- ho.
এইবার সাহস করে বলেই ফেললাম,
- তোমার একটা ছবি দিবা?
- ami faceboke chobi dite parina.
সে কোন কারনে ছবি আপলোড দিতে পারতোনা ফেইসবুকে। 
তবে সে Imo ইউজ করতো। 
সেটায় আপলোড দিতে পারতো। 
ওকে আমি Imo তেই দেখলাম। 
আসলেই ওর গাল দুইটা ফোলা ফোলা, চোখ দুইটা মায়া মায়া। ওর নাম মায়া রাখা ঠিকই আছে।
ওকে বলছিলাম "তোমার গাল এত মোটা কেনো?"
সে বলেছিলো যে বিস্কুট চিবোতে চিবোতে মোটা হয়ে গেছে।
****
তারপর মায়ার সাথে অনেক কথা হতো আমার। সারাদিন, সারা রাত। ও শুধু চ্যাটিংয়েই টাকলা ছিল এবং সত্যি বলতে এই টাকলা মেয়েটার মায়ায় পরে গেছিলাম আমি। ও অনেক সরল ছিল। যা মনে আসতো লুকোছাপা না করে বলে দিতো। ওকে হয়তো ভালোবেসে ফেলছিলাম আমি।
কিভাবে প্রপোজ করা যায় ভাবছিলাম। ভার্চুয়াল লাইফে প্রপোজ করবোনা সিদ্ধান্ত নিছিলাম। সামনা সামনিই করবো।
ওর সাথে দেখা করতে চাইছিলাম। অনেক কষ্টে রাজীও করাইছি। ওর সাথে দেখা করার ঘটনা সব সময় মনে থাকবে আমার।
একটা পার্কে সে আমায় আসতে বলেছিলো। বলেছিলো সে বোরখা পরে আসবে কালো রঙের।
তো পার্কে এসে খেয়াল হলো মায়ার আরো ডিটেইলস নেয়া লাগতো। কারন পার্কে বোরখা পরা মেয়েতে ভর্তি। কয়েকবার চক্কর মারলাম এদিক সেদিক। আমি চাচ্ছিলাম ফোন না দিয়ে ডিরেক্ট ওর সামনে গিয়ে হাজির হবো।
তো হঠাৎ এটা মাথায় আসলো যে আমি কেন হুদাই বোরখা দেখে বেড়াচ্ছি।
আমাকে দেখতে হবে কোন বোরখা পরা মেয়েটা বিস্কুট খাচ্ছে। এবং এই ভাবনার পরেই পেয়ে গেলাম মায়াকে। একটা মাত্র মেয়ে যে কোনায় বসে আপন মনে কিজানি বিস্কুট খাচ্ছে।

Comments