হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)এর একজন কালো সাহাবি ঘটনা




♥প্রিয় নবীজি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)
এর একজন কালো সাহাবি ছিলো।
তার নাম ছিলো, সা,দ (রাঃ)
সাদ আল আসওয়াদ আস-সুলুমী (রা)-তিনি ছিলেন গরীব, গায়ের রঙ ছিলো কালো। কেউ তাঁর কাছে নিজের মেয়ে বিয়ে দিতে চাইতো না।
সাদ (রা) একদিন আল্লার রাসূল (সা) এর কাছে দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি কি আল্লার জান্নাতে যেতে পারবো না?তিনি আরো বলেন!
‘আমি তো নিচু মাপের ঈমানদার হিসেবে বিবেচিত হই’। রাসুল (সঃ) বললেন! কেন তুমি জান্নাতে যেতে পারবা না? অবশ্যই তুমি জান্নাতে যাবে????
সা'দ (রাঃ) দুঃখ সহকারে বলতে লাগলেন? মদিনার, কেউ আমাকে নিজের মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছে় না’?
রাসূলুল্লাহ (সা) সাহাবীর দুঃখটা বুঝতেন পারেন।
রাসুল (সাঃ)একটি পত্র লিখে
৷ কালো সাহাবির হাতে দিয়ে
বললেন এই পত্রটি মদিনার বড় বাড়িতে
গিয়ে , মালিকের হাতে দিয়ে উত্তর
জেনে তার পরে আসবে , কালো
সাহাবী জানে না যে , এর ভিতরে কি
লেখা আছে , নবীজী(সাঃ)এর কথা
অনুযায়ী পত্র খানি নিয়ে মদিনার বড়
বাড়ির মালিকের হাতে দিল ।
নবীজী(সাঃ)এর কথা শুনে
তারাতারি পত্রটি খোলে ফেললো,
এর মধ্যে লেখা আছে __________
আস সালামু আলাাইকুম আমি হযরত
মোহাম্মদ (সাঃ) বলতেছি! আমি আপনার কাছে আমার একজন কালো সাহাবি কে পাঠিয়েছি আপনার মেয়ের সাথে আমার কালো সাহাবীর
বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য আপনার কাছে আমি তাকে পাঠিয়েছি । আশা করি
আমার প্রস্তাব আপনি গ্রহণ করবেন এবং
আমার কালো সাহাবীর সাথে
আপনার সুন্দরী মেয়ের হুড়হুড়ি সাথে বিবাহ দিবেন ,
___________ ইতি হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)
মদিনার শ্রেষ্ট ধনি লোক ছিলেন আল ইবনে-ওয়াহহাব। সাধারণ কোন ব্যক্তি ছিলেন না আল ইবনে ওয়াহহাব। তিনি হলেন মদীনার নেতাদের একজন; কিছুদিন যাবৎ মুসলিম হয়েছেন। তাঁর মেয়ে অপরূপা সুন্দরী রমণী, রূপের জন্য তাকে হুড়হুড়ি নামে বিখ্যাত ছিলেন। সেই আল ইবনে ওয়াহহাবের মেয়েকে বিয়ে করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) সাদকে পাঠালেন।
এমন নেতার মেয়ে বিয়ে করবে সাদের মতো একজন অসহায় গরীব কালো ছেলে।
সে তার সৌন্দর্য্যের জন্য এতো প্রসিদ্ধ,
৷ সে হবে সাদের বউ??
স্বাভাবিক ভাবেই আল ইবনে ওয়াহহাব
অহংকার করে বলতেছে! তোমার মত একজন কালো ছেলের কাছে, আমার হুড়হুড়িকে বিয়ে দেবো? না অসম্ভব তুমি ‘আকাশের-কুসুম কল্পনা ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে যাও’?সে চেহারাটা খারাপ করে বাড়ির দিকে রওনা হলো?
… কিন্তু তাঁর মেয়ে ততক্ষণে দরজার ফাঁক থেকে সব কথা বার্তা শুনে ফেলেছে। তখন মেয়েটা বলে উঠলো, ‘বাবা! ছেলে টা আপনার কাছে কি প্রস্তাব নিয়ে আসছে?আমাকে একটু বলবেন!তার বাবা বললেন?তোমাকে নাকি সেই ছেলেটা বিয়ে করার জন্য নবিজী আমার কাছে পাঠিয়েছেন।।।। তখন মেয়েটা বলে উঠলো? আমাকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব টা দিয়েছে কে ....তিনি বল্লেন....আমাদের বিশ্ব নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সঃ)|||
আল্লাহর রাসূল (সা) অনুরোধ করেছে বিয়েটা দেওয়ার জন্যে, কিন্তু তাকে কিভাবে ফিরিয়ে দিতে পারলেন?? রাসূলের উৎকণ্ঠা থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে আমাদের অবস্থানটা কি হবে?’এরপর সাদকে আধা পথ থেকে ফিরে এনে বললো, ‘রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে বলে দিন, আমি আপনাকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তুত’এই কথা শুনে সাদের মন সেদিন আনন্দে পুলকিত… সে যেন খুশিতে টগবগ করে ফুটছে;…তারপর ।। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললো বিয়ে জন্য ৪০০ দেরহাম মোহরানা দিতে হবে।
সাদ বললেন, হে রাসূল, আমি তো জীবনে কোনদিন চারশ দেরহাম দেখিই নি! আমি এই টাকা কীভাবে শোধ করবো? নবীজি (সা) তাকে বললেন, আলী আল-নুমান ইবনে আউফ আর উসমান (রা) এর কাছ থেকে দুইশত দুইশত করে মোট চারশ দেরহাম নিয়ে নিতে। দুজনেই উনাকে দুইশত বেশি করে দেরহাম দিয়ে দিলেন।
টাকা জোগাড় হয়ে গেলো।আলহামদুলিল্লাহ এইবার বিয়ে হয়ে গেল ! এখন নতুন বউ এর কাছে যাবেন সাদ (রা)…:::::::::::::::
রাসুল (সঃ) বলেন!
সাদ তুমি যাও বাজার থেকে তোমার বউ এর জন্যে টুকটাক কিছু উপহার কিনে নিয়ে আসো। তিনি মার্কেটে পৌঁছে গেছেন, তিনি আনন্দের সাথে বাজার করতেছেন। প্রায় বাজার সব শেষের দিকে বউ জন্য একটা শাড়ি কিনলো বাকি টাকা দিয়ে আরও কিছু জিনিস পত্র..কিনবে।.হঠাৎ করে তাঁর কানে আওয়াজ আসলো জিহাদের ডাক। ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও’ … সাদ যেখানে ছিলেন সেখানেই দাঁড়িয়ে গেলেন। একবার আকাশের দিকে তাকায়...আর একবার জমিনের দিকে তাকায়?তিনি বললেন- ‘হে আল্লাহ! আমি এই বাকি টাকা দিয়ে এমন কিছু কিনবো যা তোমাকে খুশি করবে।’ নতুন বউ এর জন্য গিফট কেনার বদলে তিনি কিনলেন একটি তরবারি আর একটি ঘোড়া। সাদ (রাঃ) তার বউয়ের কাপড়টা পুরা শরীরে পড়ে ঘোড়া নিয়ে ছুটে চললেন জিহাদের ময়দানে, নিজের চেহারাটা কাপড় দিয়ে বেঁধে দিলেন।। যেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাকে দেখে চিনে ফেলতে না পারে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে দেখলেই তো বাড়িতে পাঠিয়ে দিবেন! সে যে সদ্য-বিবাহিত! সাহাবারা বলা বলি করছিলেন, এবং আল্লাহর রাসুল (সঃ) নিজেই চিন্তা করতেছেন?যুদ্ধের ময়দানে আমাদের মুসলমানদের পক্ষে এই রকম পুরা শরীর কাপড় দিয়ে ঢেকে রেখে আমাদের পক্ষে কে যুদ্ধ করতে আসা এই -ঢাকা লোকটি কে? আলী (রা) বললেন, ‘বাদ দাও, সে যুদ্ধ করতে এসেছে।’ সাদ যুদ্ধ করতে থাকলেন, কিন্তু তাঁর ঘোড়ায় আঘাত হানা হলো, ঘোড়া পড়ে গেলো। সাদ উঠে দাঁড়ালেন। ঐ সময় নবীজি (সা) তার কালো চামড়া দেখে ফেললেন, ‘ইয়া সাদ এ কি তুমি?!’ রাসূল (সা) এর প্রশ্নের জবাবে তিনি (রা) বললেন ‘আমার মা-বাবা আপনার উপর উৎসর্গিত হোক ইয়া আল্লাহর রাসূল! হ্যাঁ, আমি সাদ’
মুহাম্মাদ (সা) বললেন, ‘হে সাদ, জান্নাত ছাড়া তোমার জন্য আর কোন আবাস নেই।’ সাদ (রা) আবারো জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিছু সময় পর কয়েকজন বললো সাদ আহত হয়েছে। রাসূল (সা) ছুটে গেলেন ময়দানে। সাদকে খুঁজতে লাগলেন। সাদের মাথা খানা নিজের কোলের উপর রেখে কাঁদতে শুরু করলেন।তাঁর অশ্রু গড়িয়ে গড়িয়ে সাদের মুখের উপর এসে পড়ছিলো। রাসুল (সা) চোখ বেয়ে নেমে আসছিলো অশ্রুর ধারা।একটু পর তিনি দুনিয়া থেকে শাহাদাত বরং করে নিলেন । কিছু পর রাসূলুল্লাহ (সা) হঠাৎ হাসতে শুরু করলেন, আর তারপর মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
আবু লুবা (রা) নামের একজন সাহাবা উনাকে দেখে বিস্ময়ে বললেন, ‘হে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমি আপনাকে এমনটি কখনো করতে দেখি নি’… আল্লাহর রাসূল (সা) বললেন, ‘আমি কাঁদছিলাম কারণ আমার প্রিয় সঙ্গী আজ চলে গেলো! আমি দেখেছি সে আমার জন্য কী ত্যাগ করলো আর সে আমাকে কতো ভালোবাসতো… কিন্তু এরপর আমি দেখতে পেলাম তার কী ভাগ্য, আল্লাহর কসম, সে ইতিমধ্যে হাউদে পৌঁছে গেছে।’ আবু লুবা জিজ্ঞেস করলেন ‘হাউদ কি?’ রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ‘এটি হলো এমন এক ঝর্ণা যা থেকে কেউ একবার পান করলে জীবনে আর কোনদিন পিপাসার্ত হবে না, এর স্বাদ মধুর চেয়েও মিষ্টি, এর রং দুধের চেয়েও সাদা! আর যখন আমি তাঁর এইরূপ মর্যাদা দেখলাম, আল্লাহর কসম, আমি হাসতে শুরু করলাম।’
‘তারপর আমি দেখতে পেলাম সাদের দিকে তাঁর জান্নাতের স্ত্রীগণ এমন উৎফুল্ল ভাবে ছুটে আসছে, যে তাদের পা গুলো কাপড় গুলো হাটু ওপরে উঠে গেছে ।।।, তাই আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম।’
নবীজি অতঃপর সাহাবাদের কাছে এসে বললেন সাদের ঘোড়া আর তরবারি নিয়ে আসতে, সেগুলো যেন সাদের স্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়, তাকে যেন বলা হয় এগুলো তার বংশধর। রাসুল(সাঃ) বললেন, তাকে জানিয়ে দিও আল্লাহ তায়া লা সাদকে জান্নাত দান করেছেন ।

Comments

Post a Comment